ক্ষুদ্র মানুষ আমি। তবে দেশে-বিদেশে একটানা ৪৫ বছরের একজন শিক্ষক-গবেষক হিসেবে সার্বজনীনভাবে সব সময় চিন্তা আমার একটু উপরের দিকে।
সিলেটের একমাত্র “শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের” ইংরেজি বিভাগেই একটানা ২৮ বছর। বিভিন্ন মেয়াদে আমার ইংরেজি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বেই ছিলাম প্রায় ২৪ বছর, ৭ বছর সংশ্লিষ্ট ছিলাম একটি আবাসিক ছাত্র-হলের  সাথে, “ব্যবসায় প্রশাসন” বিভাগের প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলাম আরও প্রায় আড়াই বছর, পিএসএস বিভাগের প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছি বিভিন্ন সময়ে। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মন-মগজ-মানসিকতা আমার একটু হলেও ভালভাবেই জানা আছে। আর, এ অবস্থান থেকেই তাৎক্ষনিকভাবে আমার আজকের এ লিখা।


আমার ফেস-বুক থেকেও নেই। ওটা হাতে নেয়ার সময়ই পাই না, যদিও কনিষ্ঠ ছেলে বলে, “বাবা, এটা শিখতে হলে এর পেছনে তোমাকে সময় দিতে হবে”। আমি শুনেই সন্তুষ্ট, ওঠা আর শেখা হয় না। পত্রিকা পড়ি খুব কম, ওগুলোর বিভিন্ন খবর আমাকে আনন্দের চাইতে পীড়া দেয় বেশি, তাই বই পড়েই হাঁসি, কাঁদি, শিখি – এ বন্ধুগুলো আমাকে আজও কোনদিন বিট্রে করেনি। লেখালেখিতে যতটুকু পারি, সময় দেয়ার আকিন্চনে থাকি, কারণ, পড়া আর লেখা – এ দুটোই আমাকে সমানভাবে শেখায়।
আর, এন্গেজড্ থাকি অন্যান্য একাডেমিক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে। অতএব, আমার ২৪ ঘন্টাই আমার জন্য এনাফ, মন থাকে ফুরফুরে, কোন দুশ্চিন্তাকে কাছে ভিড়ানোর কোন ফুরসত আমার নেই।



আজ রাত ৯ টার দিকে একটি পত্রিকা হাতে নিয়ে প্রথম সংবাদেই আমি কাহিল। শ্বাস-রুদ্ধভাবে প্রয়োজনীয় অংশটুকু পড়েই এ লিখায় হাত দিলাম। হায়রে আমার শাবি! তোর ভেতরে তো রেখে দিয়েছিস “বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরি হল”। আজ তোরই যেন হয়ে গেছে মহামারি করোনা! এতে আক্রান্ত হয়ে এ মূহুর্তে তুইও রুদ্ধশাস অবস্থায়। দায়িত্ব মনে করেই উপস্থিত বিপদে আমার এ লেখাটি যেন তোর জন্য আমার এক ফোঁটা অক্সিজেনের কাজ দেয়।
আমি আমার আজকের এ লেখাটি দ্রুতই লিখছি তোর জন্য, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, সাথে সাথে তুই প্রয়োগ করিস।
হঠাৎ করে তোর কি হল, অকস্মাৎ এ অবস্থা কেন তোর? জ্বিন-ভুত-প্রেতাত্মা-উপরি-যাদু-টুনা ধরেনি তো তোকে?
আমি কোন দুর অতীতে এ মূহুর্তে যাব না, অতীত প্রেস্ক্রিপশন দেখতে গিয়ে যদি তোর বাড়তি কিছু হয়ে যায়?
ছাত্র-ছাত্রী-হলসমূহের হাজারো কমপ্লেইন থাকাটা স্বাভাবিক। তুই সামাল দিতে যে কোন কারনে দেরি হয়ে গেছে, যদিও তোর ৩৪ বছরের ইতিহাসে বিগত সাড়ে ৪ বছর ধরে একটানা তোর স্বর্ণ-যুগ চলছে এক ডায়নামিক ও ইলেক্ট্রিক ভিসি মহোদয়ের দ্বিতীয় মেয়াদের নেতৃত্বে। আমি তো সকল ভিসিগণকেই দেখলাম। বর্তমান মাননীয় ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তোর জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছেন এই সিলেটের পবিত্র মাটিতে – এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। মনে রাখিছ, “ব্লেম-গেম ইজ দ্য ওয়ার্স্ট গেম”। ওই খেলায় যাবি না আদপেই। যদি দ্রুত আরোগ্য-লাভ চাস্, কাজে লেগে যা এক্ষুনি।


আওয়ামি লীগ সরকারের শত দোষ থাকলেও সে কিন্তু ভীতু নয়। সে ভাল করেই জানে, কোথায় কখন কি ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। এ সরকারের একটা বড় গুণ হচ্ছেঃ সে তার নিয়োগকৃত ভিসিগণকে গার্ডিয়ানশীপ দিতে জানে। রুম (রোমান-সাম্রাজ্য) পুড়বে, আর নিরু বসে বসে বাঁশি বাঁজাবে, এ সরকার এটা হতে দেবে না। আর, যে শাহজালালে শুধু ভিসি নিয়ে গণ্ডগোল হয়, এখানে সে এমন এক ভিসি পাঠিয়েছে, যিনি  দেশের সকল বিশ্বদ্যালয়ের নেতৃত্ব দিতে জানেন, এবং তা করার সৎ-সাহসও রাখেন, “হোয়াট ম্যা কাম”।


সামান্য ইংগিৎ দিতে বাধ্য হচ্ছি। এ মহামারি-করোনা-কালেও শাবি তার দৃপ্ত পদে দুর্ববার গতিতে এগিয়ে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় সকল সেক্টরে, শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন, পরীক্ষা, দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ, শাবিকে সফলভাবে সেশন-জট-মুক্ত করন, ড্রপ-কাল্চার পূর্ণ-ভাবে বিলুপ্ত-করন, গবেষণা, লোজিস্টিক সাপোর্ট্স, কন্ভোকেশন-জট দূরিকরন, রিলে রেইসের মত ভৌত অবকাঠমোর উন্নয়ন, বেস্ট অব দ্য বেস্ট নিয়োগ – এক কথায় কোন একটা সেক্টরে কোন খুঁত বের করা ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস দিয়েও মনে হয় সম্ভব হবে না।


তাই আমার আদুরে শাবি-শিক্ষর্থীগণ, যা হবার হয়েই তো গেছে, আর যেন এ্যাটম-পরিমানও না বাড়ে। এই ভিসি তোমাদের এগুলো বিন্দুমাত্র মনে রাখার মত মানুষ নন্। তোমরা অতি শীঘ্রই উৎফুল্ল মনে ক্লাশ-পরীক্ষায় ফিরবে, আমি এ টুকু গ্যারান্টি দিতে পারি। তোমরা শুধু এটুকুই বলো/জানিয়ে দাও, “স্যার, আমরা সত্যিকার অর্থেই আঁচ করতে ভুল করেছি”।
আইন-শৃংখলাবাহিনী উনাদের কাজ করতে বাধ্য, তাঁদের উপরে মন খারাপ করো না, তাঁরা তোমাদেরই অগ্রজ, আপনজন, সমূহ বিপদ এড়ানোর জন্য তাঁরা যা করার করেছে, আদপেই তোমাদের কোন ক্ষতি করার জন্য নয়, বরং তোমাদের মঙ্গলের নিমিত্তে অবশ্যই।
অতীব আনন্দের কথাঃ তোমরা তৎক্ষনাৎ-ই নতুন প্রোভোষ্ট পেয়ে গেছ, যিনি আরও অনেক অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, কারণ, বয়সের একটা ব্যাপার আছে তো। আমি উনাকে অতিব আন্তরিকভাবে চিনি, তোমরা সত্যিই ভাগ্যবান।


নতুন প্রোভোষ্টের বরাবর আমার দ্রুত লিখা এ খোলা চিঠির মাধ্যমে আমি উনার কাছ থেকে কতকগুলো পয়েন্টস্ অব্যশ্যই আশা করব, যেগুলো আংশিক হলেও না পাওয়ার কারণেই আজকের এই করোনা-মহামারির শিকার হয়েছ তোমরা:


১/ নতুন প্রোভোষ্ট-বডি হবে শতগুণ বেশি শক্তিশালী।
২/ ১০/১২ জনের এই বডি সার্বক্ষণিক তোমাদের পাশে থাকবে।
৩/ তোমাদের দাবিকৃত আরো বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এ বডি নিশ্চিৎ করবে।
৪/ প্রোভোষ্ট-বডির সদস্যগণ ইন-রোটেশন নন্-ব্রেকেবলি তোমাদের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে অবহিত থাবেন।
৫/ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নতুন এ বডি দ্রুত তোমাদের ওয়াফাই সর্বোচ্চ শক্তিশালী করবেন, কারণ, আমি জানি, আমাদের বর্তমান ভিসি মহোদয় এ ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ; উনাকে অবগত করতে হয়ত দেরি হতে পারে, তবে অর্ডার আসতে দেরি হবে না। উনারই কথা, “আমরা প্রযুক্তির সকল সেবা-গ্রহণ দুয়ারে এনে তৎক্ষণাৎ সেগুলোর সকল সেবা কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর”।


৬/ তোমাদের খাবারের মান যথাযতভাবে আরও উপযোগি করে ব্যয়-ক্ষমতার আওতাধীন আনা হবে।
৭/ আমি প্রোভোষ্ট-বডির সকল সম্মানিত সদস্যকে রিকুয়েষ্ট করব, আপনারা হল-বোর্ডারদের বাটিও প্লিজ্ তদন্ত করবেন।
৮/ প্রোভোষ্ট-বডির সদস্যদের প্রতিদিন একা একা এবং ইন্-গ্রুপ হল-পরিদর্শন রুটিন করে নিশ্চিৎ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে তাঁদের ক্লাশ-সংখ্যা হ্রাস করতে হবে, যাতে তাঁরা আবাসিক হলে সময় দিতে পারেন।
৯/ শিক্ষার্থীদের যে কোন ছোট-বড় অনুযোগ/অভিযোগ উপাস্থিত মূহুর্তে আমলে নিয়ে সর্বোত্তম সমাধান দিতে হবে। প্রয়োজনে বিষয়গুলো তৎক্ষণাৎ ভিসি মহোদয়ের নজরে আনতে হবে।
১০/ প্রোভোষ্ট-বডিকে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক আচরন এক্সট্যাণ্ড/প্রদর্শন করতে হবে। কারণ, বাচ্চারা আমাদের কাছে তাদের মা-বাবাদের আমানত।
১১/ কোন অবস্থায়ই কোন মিস্-ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এটা বর্তমান ভিসি মহোদয়েরও নীতির বাইরে।
১২/ সর্বোপরি, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলছি, সকল ক্ষেত্রে ম্যাক্সিমাম ধৈর্য-ধারণ-ক্ষমতার স্ব-প্রশিক্ষণ চর্চা করতে হবে ও জানতে হবে। কোন অবস্থতেই হুযুগে-আবেগে না চলা শিখতে হবে।
জয় হোক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের।
জয় হোক বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের।

**লেখক: ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীনসহ প্রায় ২৪ বছরের বিভাগীয় প্রধান, শাবিপ্রবি, সিলেট।