আমাদেরতো গুনাহের শেষ নাই। পরম দয়ালু আল্লাহ তাই গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথও দেখিয়েছেন। রমজান মাসে আল্লাহর ইবাদত করেন, ঈদে পশু কোরবানি করেন, সামর্থ্য হলে হজ পালন করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চান। এসবের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের দ্বারা গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ; কথা হলো, আপনার আমার সকল ইবাদত হতে হবে শুদ্ধ পথে।

 


পবিত্র রমজান মাসে আপনি ভালো খাবার খেয়ে সেহরির পর সারাদিন উপোস করলেন, সন্ধ্যায় চমৎকার পানীয় ও দামী খেজুর, পোলাও, মাংস ও আরও মজাদার খাবার খেয়ে ইফতার করলেন। অন্যদিকে আপনি অন্যের পাওনা দিচ্ছেন না, এমনকি আপনি ভাই বোনের হক আদায় করছেন না। এটা কি কোনো শুদ্ধ ইবাদত হিসেবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? আপনার সামান্য জ্ঞান থাকলে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন, আল্লাহর কাছে চাইতে হয় সকল অহংকার ও মন্দ ত্যাগ করে নিজেকে পবিত্র করার মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, বোনেরা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাদেরকে তাদের হক বুঝিয়ে দিতে হবে। এখন দেখা যায়, বছরের পর বছর যায় ভাইয়েরা বুড়ো হয়েও পৈত্রিক সম্পত্তি নিজে খায় ও তাদের ছেলে মেয়েকে খাওয়ায়, এমনকি বোনদের সম্পত্তি বুঝিয়ে না-দিয়ে মক্কা মদিনা যায়, কোরবানি করে। নিজের সন্তানকে দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ায়। অপরদিকে বোনেরা নানান কষ্টে তাদের পরিবার চালায়। এখানে ওই ভাইদের থাকে নানান কৌশল। কেউ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, ওরা ওদেরটা নেয়-না কেন? অথচ এখানে আল্লাহর হুকুম হচ্ছে, বোনদের সম্পত্তি ভাইয়েরা সচেতন ভাবে তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

কোনো কোনো ভাই বলেন, আমরা বোনদেরকে দেখে রেখেছি, ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছি, এরপর আবার পিতার সম্পদ কেন তাদেরকে দিতে হবে। এসব হলো খোঁড়া যুক্তি। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা নিসা'র ৬ নম্বর আয়াতে বলেন, "এতিমদের প্রতি নজর রেখো বিয়ের বয়স না-হওয়া পর্যন্ত। ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান ও যোগ্যতা সৃষ্টি হলে তাদের সম্পত্তি তাদের ফিরিয়ে দিবে। তারা বড়ো হয়ে উঠছে, নিজেদের সম্পত্তি নিজেরা বুঝে নিবে — এ আশঙ্কায় অন্যায়ভাবে তাড়াহুড়ো করে তাদের সম্পত্তি খরচ করে ফেলো না। অভিভাবক হিসেবে তুমি সচ্ছল হলে এতিমের সম্পত্তি থেকে কোনোকিছু গ্রহণ করবে না আর গরীব হলে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করবে। তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার সময় অবশ্যই সাক্ষী রাখবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব গ্রহণকারী।" এরপরও দুষ্ট মানুষের হুঁশ হয় না। তাই মানুষের উপলব্ধির জন্যে সুরা নিসা'র ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "নিজে অসহায় সন্তান রেখে মারা গেলে, মৃত্যুকালে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তোমার মনে যে উদ্বেগ - উৎকন্ঠা থাকতো, সেই একই অনুভূতি এতিমের প্রতি প্রদর্শন করো। আল্লাহ - সচেতন থাকো, হক কথা বলো, সুবিচার করো।" কিন্তু ; দুর্ভাগ্য হলো আমরা লেখাপড়া জানা এবং যথেষ্ট সচ্ছল হওয়ার পরেও এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করার পরেও দুর্বল ভাই - বোনদের প্রতি সুবিচার করি না। বোনদের সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে নানান তালবাহানা করি। বিশ্বাস করুন — ভাই, বোন, চাচা, চাচী, ফুপুর হক আদায় করা আল্লাহর হুকুম। এ হুকুম পালনে নানান তালবাহানা করা এক অর্থে আল্লাহর অবাধ্যতা করা। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা আলে ইমরান এর ১০ নম্বর আয়াতে বলেন, "যারা সত্য অস্বীকার করে তাদের অর্থবিত্ত ও সন্তানসন্ততি আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসবে না। ওরাই হবে জাহান্নামের জ্বালানি।" প্রিয় পাঠক, সত্য প্রচার করে অন্যকে জানিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব মনে করি তাই লিখছি। আপনাকে মানতে বাধ্য করা আমার কাজ নয়। কারণ, আল্লাহর কাছে আপনার জবাব আপনাকেই দিতে হবে। 

 

এখন ফেসবুকে পৈত্রিক ও মায়ের সম্পদ বিষয়ে ইসলাম ধর্মীয় বিধান সম্পর্কিত ওয়াজ অনেকে শেয়ার করেন। যারা শেয়ার করেন তাদের অধিকাংশ হচ্ছেন বোন ও ছোটো ভাই বা ভাতিজি, ভাতিজা, ভাগনা, ভাগনী। এরা কোনো-না কোনো ভাবে হয় বড়ো ভাইয়ের দ্বারা না-হয় চাচার দ্বারা কিংবা মামার দ্বারা পৈত্রিক সম্পত্তি বা মায়ের সম্পদের অংশ থেকে বঞ্চিত। কখনও কখনও ভাতিজারাও চাচার বা ফুপুর সম্পদ আত্মসাৎ করে বসে আছে। তাই চাচা ও ফুপুরাও মনের দুঃখে এ মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে পোস্ট করেন। এটা ইতিবাচক। আমি মনে করি, ফেসবুকের মাধ্যমে এসকল পোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে এতোদিন কষ্ট সয়েও যেসব বোনেরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকেছেন এখন তারা বুঝতে পারছেন যে, পত্রিকার পাতায় বা টেলিভিশনে প্রচার হওয়া ভূমিদস্যুদের মতো পরিবারেও রয়েছে ভূমিদস্যু। নিসন্দেহে এটি একটি ভালো কাজ। এতে আমাদের সমাজের বোনেরা তাদের অধিকার বুঝে পেয়ে নিজের প্রয়োজন মিটাতে পারবে, যা মানবিক।

 

বোন বা অন্য কারো সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্যে পরকালের শাস্তিতো আছেই, একই সাথে রয়ে যায় কষ্ট করে জীবন পাড়ি দিয়ে নিজের ও সন্তান সন্ততির জন্য লাঞ্চনা। সম্পত্তি নিয়ে হাজার হাজার মামলা দেশের আদালত সমূহে প্রতিদিন হচ্ছে। এদেশের বোনেরা আগের দিনে নিরবে মেনে নিতো, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে এখন বোন ও সন্তানরা সচেতন হওয়ার কারণে আইনের আশ্রয় নেয় এবং বিশ বছর বা পঞ্চাশ বছর পরে হলেও তা রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী আদায় হয়। এমন উদাহরণ এখন হাজার হাজার আছে। প্রায় প্রতিদিন দেশের আদালতে এমন মামলার রায় হচ্ছে এবং অপরাধী কিংবা অপরাধীর সন্তানরা সম্পত্তি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই আল্লাহ - সচেতন হলে ইহকাল ও পরকালে সম্মান মিলবে। 

 

প্রিয় ভাইয়েরা, আসুন আল্লাহ - সচেতন হই। অপরের হক আদায় না-করে কোনো ইবাদত কোনো শিক্ষা ভালো ফল বয়ে আনবে না। অপরের হক নিজের কাছে কৌশলে রাখা হারাম। আল্লাহর কাছে হারাম কোনোকিছু পৌঁছে না। আল্লাহ সকলকে জ্ঞান দান করুন।

 

লেখক - মোহাম্মদ আব্দুল হক, কলামিস্ট ও সাহিত্যক