"বীরের এ রক্তস্রোত
মাতার এ অশ্রুধারা
এর যত মূল্য সে কী
ধরার ধুলায় হবে হারা?"
 

বিশ্বে মাত্র দুই ভাষার জনগণ ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। বাংলা ও আসামি ভাষাভাষী। তন্মধ্যে বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলন ও ভাষার জন্য অসামান্য ত্যাগ বিশ্বে বিরল।


১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর দম্ভোক্তি "Urdu and Urdu shall be the state language of Pakistan"। সেই শুরু। এর পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা এমনকি আরবি হরফে বাংলা লিখার প্রস্তাবও দেয়।
 

এই প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, বর্তমান বুয়েট সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জোর আন্দোলন শুরু করেন। নীরেন্দ্রনাথ দত্ত আইনসভায় দৃঢ়চিত্তে বলেন, "উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাস্ট্রভাষা করা হউক"।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষার দাবিতে আন্দোলন করে গ্রেফতার হন [সূত্রঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী]।
১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি এই ১২ দিন ফরিদপুর জেলে আমরণ অনশন করেন। সাথে জেল থেকেই ভাষাসৈনিকদের দেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। [সূত্রঃ ভাষাসৈনিক গাজিউল হক]
 

ইডেন কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবা বলেছিলেন, "বাংলা ভাষার দাবিতে প্রয়োজনে বাংলার মেয়েরা রক্ত বিসর্জন দিবে"।

ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত, শফিক, আব্দুস সালাম, অহিউল্লাহ সহ নাম না জানা সকল ভাষাসৈনিকের আত্মত্যাগের ফলে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের ২১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি মেলে।
 

অবশেষে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়, "প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা"।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ কতৃক  ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর স্বীকৃতি পায়। বিশ্বব্যাপী ভাষার প্রতি সম্মান, ভাষা নিয়ে সচেতনতা, ভাষার বিকৃতি রোধেই এই ঘোষণা।
 

কিন্তু দুঃখের বিষয় ইন্টারনেটের এই বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করি, ভাষার বিকৃত ব্যবহার। ভুল বানান। বাংলা ভাষার সাথে অন্য ভাষার দৃষ্টিকটু মিশ্রণ। বিশেষত, বার্তা আদান প্রদানে এ ধরনের অপপ্রয়োগ ভাষাসৈনিক ও ভাষাশহিদকে নিরবে অপমান করে বলে মনে হয়।

একজন বাঙালি হিসেবে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক বাংলা ভাষার অপব্যবহার রোধ করা। নিজে সঠিক ভাষা ব্যবহার করবো, অন্যদের-ও সঠিক ভাষা ব্যবহারে উৎসাহিত করবো। বাংলা ভাষার পাশাপাশি সকল আঞ্চলিক ভাষাকে শ্রদ্ধা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এমাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর একুশের প্রথম কবিতার মতোই যেন আমাদের প্রত্যয় হয় দৃঢ়, " আজ আমি শোকে বিহবল নই, আজ আমি ক্রোধে উন্মত্ত নই। আজ আমি প্রতিজ্ঞায় অবিচল"।

 


লেখক: উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (সুপারিশপ্রাপ্ত) ৪৩ তম বিসিএস, সাবেক শিক্ষার্থী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।