সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় দখল করে বসতঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শৈলেন চন্দ্রের বিরুদ্ধে।

 


শুধু জায়গা দখন নয়, প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের জায়গা সম্পত্তি ভোগ দখল, অবৈধ পন্থায় বসতঘর নির্মাণ, সরকারি বরাদ্দের টিউবওয়েল নিজের রান্নাঘরে পেছনে স্থাপনসহ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও পাওয়াগেছে ঐ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি বিদ্যালয়ের জায়গায় প্রধান শিক্ষকের ঘর উচ্ছেদের দাবিসহ যাবতীয় সম্পত্তি প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন গ্রামের ২৮ বাসিন্দা। তবে গ্রামবাসীকে একহাত দেখিয়ে যাচ্ছেন সেই শিক্ষক। সরকারি ভূমিতে তৈরি ঘর সরকার উচ্ছেদ না করলে দখল ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকের ক্রয়কৃত ভূমিতে ১৯৮৫ সালে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামবাসী। পাঁচ শিক্ষকের সাথে শৈলেনচন্দ্রও ছিলেন। এমিপওভূক্ত হওয়ার পর পাশ্ববর্তী আরেকটি স্থানে সরকারি বহুতল ভবন স্থাপন করা হয়। নতুন ভবন হওয়ার পর পুরতান ভবনের জায়গাটি গ্রামবাসী অস্থায়ি ঘাট হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের ২৯ শতাংশ ফসলি জমি, পুরাতন ভবনের ভূমি ভোগদখল করে আসছেন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের জায়গায় অবৈধভাবে স্থায়ী বসতঘর নির্মাণ করেন তিনি। বসতঘর নির্মাণের ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বাঁধা আসলে তোয়াক্কা করেননি তিনি।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে শিবপুর গ্রামে গিয়ে বসতঘর নির্মাণের সত্যতা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে গ্রামের একাধিক বাসিন্দার সাথে কথা বললে প্রধান শিক্ষক শৈলেন চন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে মুখ খুলেন অনেকেই। গ্রামবাসীর অভিযোগ বিদ্যালয়ের নিকটে বাড়ি হওয়ায় স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন তিনি।  


চলতি অর্থবছরে প্রাপ্ত সরকারি টিউবওয়েল বিদ্যালয়ের জায়গা স্থাপন না করে নিজের রান্নাঘরে পেছনে স্থাপন করেছেন বলে জানান তারা। তাছাড়া বিদ্যালয়ের একটি সচল টিউবওয়েলে মাটি ফেলে ঘর নির্মাণের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এবিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ে গেলে পাওয়া যায়নি প্রধান শিক্ষক শৈলেন চন্দকে। সহকারী এক শিক্ষিকা জানান তিনি উপজেলায় গেছেন। প্রধান শিক্ষক ইচ্ছে স্বাধীন মত বিদ্যালয়ে আসেন, সপ্তাহের প্রায়দিন বাহিরে অবস্থান করেন বলে জানান আরেক শিক্ষিকা।

শিবপুর গ্রামের স্থানিয় বাসিন্দা লিটন তালুকদার বলেন, প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের জায়গায় ঘর তুলেছেন তিনি। আমরা বাঁধা দিলেও তিনি তা মানেননি। শুধু ঘর নয় অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের সকল সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছে। সরকারি টিউবওয়েল তার জায়গায় স্থাপন করেছে। বিদ্যালয়ের আরও ২৯ শতাংশ জমি তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছে। তাঁর ক্ষমতার কাছে আমরা কিছুই না।

সুশন চন্দ্র তালুকদার নামের আরেকজন বলেন, দাতা সদস্য হিসেবে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শৈলেন চন্দ্র তার বাবাকে বছরের পর বছর বিদ্যালয়ের সভাপতি করে আসছেন। বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ডের টাকা আসেলেও সেগুলোর কোনো হিসেব নেই। বিদ্যালয়ের সকল সম্পত্তি নিজের মতো ভোগদখল করে আসছেন তিনি। তিনি বিদ্যালয়কে নিজের সম্পত্তি মনে করছেন। আমরা বাঁধা দেয়ায় তিনি বলেন সরকারি জায়গায় ঘর বানাইছি সরকার বাঁধা দিবে আপনার কে বাঁধা দেয়ার।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক চিন্তাহরন চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে শৈলেন চন্দ্রসহ আমরা ৫ জন বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি ক্রয় করি। বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হওয়ার পর আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলাম। আমার সময়ে সহকারি শিক্ষক শৈলেনের কর্মকান্ডের জন্য একাধিকবার অভিযোগ হয়েছে। প্রাথমিক দপ্তর থেকে তিরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। আমি অবসরে যাওয়ার পর তদবীর করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন তিনি। তখন থেকে তার স্বেচ্ছাচারিতা আরও বেড়ে গেছে।

শৈলেন চন্দ্রের মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলে, ঘর তৈরির বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিলেও জায়গার মূল মালিক হিসেবে নিজেকে দাবি করেন তিনি। তবে টিউবওয়েল তার জায়গায় হলেও তার লাইন বিদ্যালয়ে নেয়া হবে বলে জানান তিনি। 

স্বেচ্ছাচারীতার বিষয়ে তিনি বলেন, হিংসাপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করা হচ্ছে।

শাল্লা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার রায় বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সরেজমিনে তদন্ত করেছি। ঘর নির্মাণের সত্যতা পেয়েছি। তবে জায়গার মালিক কে সেটি চিহ্নিত করতে অন্য বিভাগ রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, তদন্ত রিপোর্ট এসেছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত-০১