ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানো সংক্রান্ত যুক্তরাজ্য সরকারের আনা ‘বিতর্কিত’ বিলটি পার্লামেন্টে পাসের কাছাকাছি চলে এসেছে৷


সোমবার এ আইন নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসে আলোচনা হয়। এদিন, উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস থেকে পাঠানো সব সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করেছেন নিম্নকক্ষের আইনপ্রণেতারা। 



দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে, সেখানেই তাদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে। কিন্তু পরিকল্পনাটি বারবার আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় এখন পর্যন্ত কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠানো সম্ভব হয়নি।


হাউস অব লর্ডসের অনির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের প্রস্তাবিত ১০টি সংশোধনী বাতিল করার পক্ষে ভোট দিয়েছে হাউস অব কমনসের নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা।


এই আইনটি পাস হলে, পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাকে একটি নিরাপদ দেশ হিসাবে ঘোষণা করা হবে এবং ব্রিটেনের মানবাধিকার আইনের কিছু অংশ এই আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। ফলে, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সরকারের জন্য সহজ হয়ে যাবে।

বুধবার বিলটি আবারো সংসদের উচ্চকক্ষে ফেরত যাবে৷ বিলটি ভোটে পাস হলেই তা আইনে পরিণত হবে।


দেশটিতে এই বছর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তার আগেই রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানো শুরু করতে চায় সুনাক প্রশাসন। কারণ, বিরোধী লেবার পার্টির কাছে জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকা ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ভোটের মাঠে নিজেদের চাঙ্গা করতে চান।


বিলটি আইনে রূপ নিলে, রুয়ান্ডা নিরাপদ দেশ কি না তা নিয়ে ব্রিটিশ আদালতে কোনো যুক্তি শুনানির সুযোগ থাকবে না। তবে, যেসব আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডা পাঠানোর জন্য সরকার নির্বাচিত করবে, তাদের অবশ্য ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার অধিকার থাকবে।


রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানোর মাধ্যমে, ইংলিশ চ্যানেলজুড়ে আশ্রয়প্রার্থীদের বিপজ্জনক যাত্রা থামাতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার। আর এর মধ্য দিয়ে, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের আবাসন খরচও অনেক কমে আসবে৷ বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বছরে প্রায় ৩০০ কোটি পাউন্ড অর্থ খরচ হচ্ছে।


ব্রিটিশ সরকার হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা করছে৷ তবে পূর্ব আফ্রিকার দেশটির এখন কয়েকশ আশ্রয়প্রার্থীকে নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী সুনাক বলেছেন, সরকার আগামী ‘বসন্তে’ রুয়ান্ডায় ফ্লাইট পাঠাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ তার মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রুয়ান্ডামুখী প্রথম ফ্লাইটের যাত্রীদের চূড়ান্ত করেছেন সরকারের কর্মকর্তারা।


এই মাসের শুরুতে, পার্লামেন্টের ব্যয় নজরদারি সংস্থা (ওয়াচডগ) জানিয়েছে, প্রথম তিনশ আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডা পাঠানো ও দেখাভাল করতে ৬০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি অর্থ খরচ হবে।


দেশটির ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চ অনুমান করছে, এই পরিকল্পনার চূড়ান্ত ব্যয় পাঁচ বছরে প্রায় চারশ কোটি পাউন্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত