সিলেট নগরীতে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’। ভয়ঙ্কর এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা চুরি, ছিনতাই, মারামারি এমনকি খুনোখুনিতেও জড়িত হচ্ছে। অনেক সময় প্রতিবাদ করতে গেলে করুণ দশা হয় সাধারণ মানুষের। ফলে এই গ্যাং এর হাতে জিম্মি নগরীর পাড়া-মহল্লার মানুষ। সর্বশেষ গত এক মাসের ব্যবধানে নগরীতে দুটি খুনের ঘটনায় আবারও আলোচনায় কিশোর গ্যাং।
অভিযোগ রয়েছে- রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে উঠতি বয়সের কিশোররা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানে ধরা পড়লেও তাদের বিশেষ তদবিরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর কাজিটুলা, আম্বরখানা, জিন্দাবাজারের জল্লারপাড়, রিকাবীবাজার, জালালাবাদ, মদিনা মার্কেট, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ এলাকা, দক্ষিণ সুরমা, টিলাগড়, মেজরটিলা, আলুরতল এলাকায় এসব গ্যাংয়ের সদস্যদের দৌরাত্ম বেশী। এসব এলাকার পাড়া-মহল্লায় চলে তাদের নানা অপরাধ কার্যক্রম। এ চক্রের অনেকেই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার চালক।
পুলিশের একটি সূত্র সিলেটভিউকে জানায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও দল নেতাদের তালিকা তৈরি করতে ইতোমধ্যে নগরীর ৬ থানায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মতে কাজও শুরু করেছে পুলিশ।
এদিকে ৬ জুন সিলেট নগরীর মানিকপীর টিলায় বন্ধুর ছুরিকাঘাতে খুনের শিকার হন জকিগঞ্জ উপজেলার আব্দুল হান্নান শিমুলের ছেলে আবুল হাসান সাবিল (২৬)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন শিমুলের বন্ধু শাহীন।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাবিলের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পাশে পাঠাও কুরিয়ারের কিছু ডেলিভারি সামগ্রী ও একটি বাইসাইকেল পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের সহায়তায় শাহিনকে আটক করে পুলিশ। শাহিন কাজীটুলা এলাকার বাসিন্দা। সাবিল হত্যার ঘটনায় গত শুক্রবার গ্রেপ্তার শাহিন আহম্মদকে (১৯) রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এরআগে ৩ মে সন্ধ্যায় নগরের ছড়ারপাড় এলাকায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেক কাটা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ছুরিকাঘাতে মো. আলী নামে এক কিশোর খুন হন। নিহত আলী কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরের নুর আলীর ছেলে।
এই খুনে ছড়ারপাড় ও কামালগড় এলাকার দুই পক্ষের কিশোরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আলী তার এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যায়। সে অনুষ্ঠানে কামালগড়েরও কয়েকজন কিশোর উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জন্মদিনের কেক কাটা নিয়ে দুই এলাকার কিশোরদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষরা আলীকে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় দুই সপ্তাহ পর ১৮ মে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আয়োজিত মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সুধী সমাবেশে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন কিশোর গ্যাং নিয়ে কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। আপনার সন্তান কার কার সাথে মিশছে এবং নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে কী না সেদিকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মান করা সম্ভব। ঐ অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তা সিলেটের কিশোর গ্যাং এর ভয়াবহতা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিলেটভিউকে বলেন, এসব কিশোর অপরাধী ও কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার রয়েছে। কোথাও কোনো অপরাধের খবর পেলে তারা সাথে সাথে অ্যাকশনে যাচ্ছেন। কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না অপরাধীদের। জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
র্যাব-৯ এর সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া অফিসার) মসিউর রহমান সুহেল সিলেটভিউকে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের ঠিম কাজ করছে। আমরা এই গ্যাংয়ের খবর পেলেই অভিযান পরিচালনা করি। ইতোমধ্যেই এই গ্যাংয়ের তালিকা করতেও আমরা কাজ করছি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / নুরুল / মাহি /এসডি-৫১৮৫