পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কেউ কেউ দেশেই রয়েছেন ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’। আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলায় বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে গ্রেফতার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। এতে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন পলাতক নেতারা। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে অনেক ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক। কেউ কেউ হত্যা মামলার আসামি। কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে, কেউ হামলা থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে রয়েছেন। দুজন চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয়ে এসে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
পাঁচ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত (২৮ অক্টোবর) সিলেট বিভাগে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলার অভিযোগে অনন্ত ৯ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রেফতার হয়েছেন। যারা আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তথ্যমতে, ইউপি চেয়ারম্যানরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদ, জন্ম-নিবন্ধন, মৃত্যু-নিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে। গ্রামে বিভিন্ন সালিস, নতুন রাস্তা নির্মাণ, পুরোনো রাস্তা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে।
চেয়ারম্যান না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে এই মুহূর্তে চরমভাবে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সচেতন মহল বলছে- নাগরিক সেবার মূল কাজটা ইউপি সদস্যরা চালিয়ে নিচ্ছেন। ইউপি সদস্যরা না থাকলে চরম সংকট দেখা দেবে।
গ্রেফতার যেসব ইউপি চেয়ারম্যান
সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ইউপি কার্যালয় থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৯ এর হাতে গ্রেফতার হন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম সাইস্তা।
রোববার (২৭ অক্টোবর) র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন জেবুল। তাকেও ইউপি কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।
১৫ অক্টোবর সিলেট মহানগরীর বন্দরবাজার এলাকা থেকে বিয়ানীবাজারের চারখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হোসেন মুরাদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়।
৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর নয়া সড়ক এলাকা থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদকে (৪৪) এসএমপি সিলেট কোতয়ালী থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯।
৩ অক্টোবর সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক এম নিজাম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯।
২২ অক্টোবর সোমবার রাতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন রেজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২২ সেপ্টেম্বর নগরের জালালাবাদ থানা এলাকা থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অদুদ আলমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৯।
৪ সেপ্টেম্বর সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসদর এলাকা থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম মতছিনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯।
২৯ আগস্ট সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন সাবেক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগ্নে ও বড়লেখা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ জুয়েল।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি