একটু লক্ষ করি। ইসরাঈল-ফিলিস্তিন-লেবানন-হুতি (ইয়েমেন) যুদ্ধ, ইরানের শক্তিমত্তা ও আল-র্ক্বোআনের ভবিষ্যৎবাণীঃ
কয়েকদিন পূর্বে গণমাধ্যমের সুবাদে শুনলাম=ইরান নাকি আমেরিকা ও গোটা পশ্চিমা বিশে^র সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে উধর্¦াকাশে তাদের কি একটা যান পাঠিয়ে এর সফল পরীক্ষাও চালিয়েছে, যা ইতিপূর্বে কোন দেশ বা জাতি করে দেখাতে পারে নি। দেশে-বিদেশে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে টানা ৪৫ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা আমার থাকলেও আমি তো আর ঐ সমস্থ বিষয়াবলির উপর বিশেষজ্ঞ নই। যে কারণে, ঐ যান কী রকম যান ছিল, বা কোথায় ওটা পাঠিয়ে কী সাফল্য ইরান পেয়েছে, তা মনেও রাখতে পারিনি।
তবে আজ চির-আধুনিক মহা বিজ্ঞান-গ্রণ্থ আল-র্ক্বোআনের সূরাহ “মুহাম্মদ” পড়ছিলাম। সর্বশেষ আয়াতে গিয়ে যা পড়লাম, তার বাংলা তরজমা দাঁড়ায় এইরকমঃ
“(হে আরবের মূ’মিনগণ!); দেখ, তোমরাইতো সেইসমস্থ লোক, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের কেউ কেউ তা করতে কার্পণ্য করছে। তবে, যে কার্পণ্য করছে, সে তো (প্রকৃতপক্ষে) তা করছে স্বয়ং তার নিজের জন্যই”, (অর্থাৎ, তোমাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদের কিছু অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করার দাওয়াত দেয়া হলে তোমাদের কেউ কেউ এতে কৃপণতা করে। যে ব্যক্তি এতেও কৃপণতা করে, সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করে না, বা করতে পারেও না, বা করতে পারবেও না; বরং এর মাধ্যমে সে নিজেরই ক্ষতি করে), [রেফাঃ ফাতহুল ক্বাদীর, সা’দী])।
“আর, আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। আর, যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; এবং তারা (ঐ নতুন সম্প্রদায়) তোমাদের মত (কৃপণ) হবে না”।
(রাসূলুল্লাহ সঃ সাহাবায়ে কেরামের সামনে এই আয়াত তেলাওত করলেন, তখন সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কোন জাতি, যাদেরকে আমাদের স্থলে আনা হবে, এবং তৎপর আমাদের মত শরিয়তের বিধানাবলির প্রতি তারা বিমুখ হবে না? রাসূলুল্লাহ সঃ মজলিশে উপস্থিত সালমান ফারসী (রাঃ)-র উরুতে হাত রেখে বললেন=“ইনি এবং তার জাতি” (সুবহানাল্লাহ! সালমান ফারসী প্রাচীন পারস্য সা¤্রাজ্য অর্থাৎ বর্তমান ইরানের নাগরিক ছিলেন)। নবীজি সঃ আরও বললেন=যদি সত্য দ্বীন সপ্তর্ষীম-লের কোন একটি নক্ষত্রেও থাকত, যেখানে মানুষ পৌঁছাতে পারে না, তবে পারস্যের কিছুসংখ্যক লোক সেখানে পৌঁছেও সত্য দ্বীন হাসিল করত, এবং তা মেনে চলত। [রেফাঃ সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৭১২৩, তিরমিযীঃ ৩২৬০, ৩২৬১])।
তা হলে এখন আমরা একটু চিন্তা করি, অদূর ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, নতুন আবিষ্কারে, মহাকাশ জয়ে, নতুন নতুন এবং অপরাজেয় শক্তিশালী সমরযান উদ্ভাবন, সর্বদূরের নক্ষত্রে গমন এবং তথায় বসবাস, ইত্যাদিতে ইরান কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে, আর এ ক্ষেত্রে ইরানকে কেউ টেক্কা দিতে পারবে কি না? সৃষ্টিকর্তার কসম, আল্লাহ সত্য, আল্লাহর র্ক্বোআন (কালাম) সত্য, নবীজি সত্য এবং তাঁর কথাও সত্য। কারণ, নবীজি কোন কথা তাঁর নিজ থেকে বলেন নি।
এখানে এ কথা স্মরন রাখতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সঃ এর ভবিষ্যদ্বানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি কোন সম্প্রদায় আল্লাহর দ্বীন থেকে, নবীজির সূন্নত থেকে দূরে সরে যায়, রাসূলের দ্বীনের সাহায্য করতে পিছ পা হয়, তবে আল্লাহ তাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে এর স্থলাভিষিক্ত করবেন, তারা হতে পারে আরব, হতে পারে অনারব, হতে পারে কাছের কিম্বা দূরের কোন জাতি।
ইতিহাস থেকে প্রমানিত যে, আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন জাতির মাধ্যমে তাঁর দ্বীনের জন্য এ খেদমত নিয়েছেন। তারা সবাই পারস্য কিম্বা অন্য কোন সুনির্দিষ্ট এক জাতি ছিল না (আল-র্ক্বোআনে অনেক শক্তিশালী জাতির ইতিহাস বর্ণিত রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত এ সব বর্ণনা অঠুট থাকবে)। পারস্যের লোকদের মধ্য থেকে যাঁরা এ কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছেনঃ ইমাম বুখারী, আবু হুরায়রাহ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, নাসায়ী সহ আরোও অনেকে।
তাঁরা সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অনুসারি ছিলেন। এ ব্যপারে রাফেযী, মু’তাযিলা কিম্বা খারেজিদের কোন সামান্যতমও খেদমত বা অবদান ছিল না। বরং তাদের মতবাদ খ-ন করতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের যে সমস্থ ইমাম পরিশ্রম করেছেন, উপরের ঐ আয়াত তাদেরকেও শামিল করে।
(সকল রেফারেন্স=র্ক্বোআনুল কারীম, অনুবাদ ও তাফসীর, ২য় খ-, পৃঃ ২৪৩১ ও ২৪৩২, বাদশাহ্ ফাহ্দ র্ক্বোআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স, আল- মাদীনাহ আল-মুনাওওয়ারাহ, সৌদি আরব।