বালাগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রতিষ্টাতা অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, কবি মহিউদ্দিন শীরুর ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ করেছেন শিক্ষকবৃন্দ। একজন সত্যিকারের অভিভাবক উল্লেখ করে শিক্ষকবৃন্দ বলেন, শীরু ভাইকে কখনো ভোলার নয়। তিনি ছিলেন বিরলপ্রজ। বহুমুখী প্রতিবার অধিকারী। ভুলেন নি এ অঞ্চলের মানুষ। মিস করে এ কলেজের ইট, পাথর, বালুকনা। মিস করে সবুজ ঘাস, ফুল, সবুজ পাতা।

সোমবার কলেজে সংক্ষিপ্ত পরিসরে স্মৃতিচারণ করা হয়। 


 

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পার্থ সারথী চৌধুরী বলেন, মহিউদ্দিন শীরু ছিলেন সত্যিকারের বালাগঞ্জের কৃতিসন্তান। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক কীভাবে ঘনিষ্ট হয় সেটা কাছ থেকে দেখেছি। সব শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে মিশতেন। কার সাথে কি ব্যবহার করতে হয় তা খুব ভালো জানতেন। তাঁর সেন্স অব হিউমার ছিল প্রবল। এ অঞ্চলের মানুষের হ্রদয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন তিনি। আজ তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠান ফুলেফুলে সুশোভিত। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে তিনি দেখে যেতে পারেন নি।
 
পার্থ সারথী বলেন, মহিউদ্দিন শীরু আমাদের সহকর্মী হলেও অনেক কিছু আমাদের শিখিয়েছেন। যা চলার পথে পাথেয়। 


শিক্ষক পর্ষদের সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম মাসুক বলেন,কলেজ পড়ার সময় থেকে শীরু ভাইর সাথে পরিচয়। কখনো সম্পর্ক খারাপ হয় নি। পরবর্তীতে সহকর্মী। ২০০৫ সালে আমাকে নিয়ে লন্ডন যান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এলাকার প্রবাসীরা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। ফান্ড সংগ্রহ করে কলেজের অবকাঠামো তৈরি করেন। এ সময় শিক্ষকদের জন্যও আলাদা ফান্ড নিয়ে আসেন । শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান মানুষ ভুলতে পারবে না। 

অধ্যাপক প্রনয় কুমার পাল বলেন, শুধু বালাগঞ্জ কলেজই নয়, গোয়ালাবাজার মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় সরাসরি তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল। এলাকার প্রতি দরদ থাকার কারনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লোভনীয় চাকরির সুযোগ পাওয়ার পরেও তিনি যান নি। হাস্যরসে তিনি অনেক শিক্ষনীয় কথা বলতেন। 

 

অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য বলেন, মহিউদ্দিন শীরু ভাইর সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল ভাই- বন্ধু, পিতা -পুত্রের মতো। অভিভাকত্ব কি জিনিষ তাঁর কাছে না আসলে বুঝা যেতো না। মহিউদ্দিন শীরু সাংবাদিকতার উপরে সবচেয়ে বড় কাজ করেছেন তাঁর ' সিলেটের শত বছরের সাংবাদিকতা' র মাধ্যমে। সাহিত্যেও তাঁর অবদান রয়েছে। 
অধ্যাপক নন্দা দে বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানের বাইরেও শীরু ভাইর সাথে আমাদের মধুর একটা সম্পর্ক ছিল। প্রথমদিন তিনি অপেক্ষা করে আমাকে কলেজে নিয়ে আসেন। এমন মানুষ আর আসবে না। এখনো তাঁর পরিবারের সাথে সম্পর্ক অটুট আছে। 

অধ্যাপক আছলম আলী বলেন, শীরু ভাই দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য ছিলেন।  সততার সাথে সারাজীবন সাদামাটা জীবন যাপন করেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। 

বিজয় কৃষ্ণ দেব বলেন, দেশে বিদেশে মহিউদ্দিন শীরু স্যারের ব্যাপক পরিচিতি ছিল। আমাদের অনেকেরই তাঁ হাতেই নিয়োগ হয়েছে। এ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। 

অধ্যাপক সঞ্জিব কান্তি ধর বলেন, শীরু ভাই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। প্রতিনিয়ত আমরা শীরু ভাইকে মিস করি। 

অধ্যাপক কৃষ্ণা দেব বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকের বাইরেও আমি শীরু ভাইর কাছে ঋনী। এ ঋন কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। বাসায় গেলে তাঁর প্রিয় করলা ভাজি, ডাল রান্নার কথা বললেও আপ্যায়নে আন্তরিকতা ছিল ভরপুর। 

অধ্যাপক ইমরুল কায়েস মৃধা বলেন, তাঁকে আমি পিতার আসনে বসিয়েছিলাম। তাঁর অভিভাকত্বের জায়গাটা ছিল খুব শক্ত। আমার একটা সান্ত্বনা হচ্ছে মৃত্যুর খবর পেয়ে কম সময়ে সিলেট চলে আসি এবং জানাযা এবং দাফনকার্যে অংশ নিতে পারি। 


অধ্যাপক সাথী রানী দাস বলেন, শীরু ভাইকে জীবনেও ভুলতে পারবো না। তাঁর মৃত্যুদিনে আমার ছেলের জন্মদিন ছিল। খবর পাওয়ার পর নিমিশেই সব ম্লান হয়ে যায়। সারা রাত ঘুমুতে পারি নি।

 

লেখক: অহী আলম রেজা