হে নারী! দিনে তুমি যতবারই হিজাব পরিধান করবে, মনে রেখো, তুমি ততবারই আল্লাহ্র পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পরিধান করছ। ইয়েমেনের একজন যুবতীকে (নামঃ তাওয়াক্কুল কারমান) সাংবাদিকরা তার নিজের হিজাবের ব্যাপারে প্রশ্ন করে মেয়েটির কাছ থেকে যে উত্তরটি তাঁরা পেয়েছিলেন, তা হলঃ “জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগে পুরুষগণ অনেকটাই উলঙ্গ থাকত। তাদের যখন শুভবুদ্ধির উদয় হল, তখন থেকেই তারা আজকের পুরুষদের মতই বস্ত্র পরিধান করতে আরম্ভ করে দিল। আমি স্বয়ং আজকে যে অবস্থানে আছি, বা যে হিজাব আমি পরিধান করছি, একজন নারী হিসেবে আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার চিন্তা ও শালীনতা আমাকে সম্মানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্থান করে দিয়েছে। আমার হিজাব কস্মিনকালেও আমাকে বিব্রত করে নি, বরং এ হিজাব আমাকে করে তুলেছে সভ্য, যে আসন আজ পুরুরা লাভ করেছে। হিজাব ত্যাগ করা মানেই হচ্ছেঃ নারীরা আদিকালের সেই অসভ্য যুগেই ফিরে গেছে/যাচেছ”। 

প্রসঙ্গত, এ যুবতীটিই ইয়েমেনে “নোব্ল্ প্রাইজ”অর্জন করেছে।


ফিলিস্থিনের ‘গাজা’ এলাকা থেকে এক মেয়ে লিখেছেঃ “রাতে ঘুমানোর সময়ও আমরা হিজাব পরে বিছানায় যাই। এর কারণ হচ্ছেঃ রাতে ইসরাইলি বোমা হামলার কারণে আমরা যদি মারা যাই, তা হলে উদ্ধারকর্মীগন যেন আমাদেরকে আপাদমস্তক হিজাব-পরিহিত অবস্থায়ই পায়” (আর, আজীবনের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আশা করব, মেসেজটি জাতিসঙ্ঘের নজরে পড়বে, আর তাঁরা আশু বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন)।


 একজন আধুনিক ও শিক্ষিত নারীর ক্ষেত্রে এই হল হিজাবের গুরুত্ব। আর, দেশে-বিদেশে আমার দীর্ঘ শিক্ষক-জীবনের উপলব্ধি হচ্ছেঃ 
“কুশিক্ষার চাইতে অশিক্ষা ভাল”। অশিক্ষিত-নিরক্ষর কেউ অন্তত ‘টেরোরিষ্ট’ হবে না, সে দেশের রিজার্ভ মেরে খাবে না, বা বিদেশে টাকা পাচার করবে না, ও কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলতে পারবে না।

আমাদের দেশে বা সমাজে অনেক কুপ্রথা-কুসংস্কার চালু আছে; যেমনঃ রমজান মাসে মেয়ের শ^শুর বাড়িতে ইফতারি দেয়া, মৌসুম এলে আম-কাঁটলি দেয়া, জামাই বাবু ও তার বন্ধু-বান্ধবকে মাঝেমধ্যে (বিশেষ করে দুই ঈদে) দাওয়াত দিয়ে এনে খাওয়ানো ও কাপড়-চোপড় দেয়া, মেয়ে গর্ভবতী হলে তার শ^শুরবাড়িতে মিষ্টি-হাদিয়া পাঠানো, পীরের মাজারে মানত করা, কোন উদ্দেশ্য নিয়ে পীরের মাজার জিয়ারত করা, তাবিজ-কবজ-ঝাড়ফুক-করা, সূতা বা তাগা-পড়া দেয়া, সুপারি পড়া-পানি পড়া দেয়া, বাটি চালান দেয়া, ওঝা এনে জ¦ীন ভূত তাড়ানো বা মৃগী-রোগ, পেরালাইসিস্ রোগ ইত্যাদি তাড়ানো, ফু দেয়ানো, থামা-থামি-তে বিশ^াস করা, নজর দেয়া, বান মারা, যাদু-টুনা করা, হায় আল্লাহ, আরো কতকিছু!

কিন্তু নামাজ-রোজা-যাকাত আদায় করা ইত্যাদি মহান আল্লাহ তা’লা ও তাঁর চির-আধুনিক পবিত্র কালামে-পাকের ফরজ বিধান। এগুলো কখনোই কোন সামাজিক প্রথা নয়। ইসলামী শরিয়তে বিয়ের বেলায় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদানও ফরজ বিধান। ঠিক একইভাবে নারীর জন্য হিজাব বা পর্দা করাও আল্লাহ পাকের একটি ফরজ বিধান। এটাতে ছাড় দেয়ার কোন অবকাশ নেই। অনেকে যেমন নামাজ-রোজায় গাফলতি করে, ঠিক তেমনি অনেক মহিলাও হিজাব পালনে গাফলতি করেন। এতে কিন্তু আল্লাহ্র ফরজ বিধানের ন্যুনতম কোন হের-ফের হয় না। ফরজ বিধান পালন না করার জন্য যে শ^াস্তি শরিয়তে নির্ধারিত আছে, তার পুরোটাই বান্দাকে ভোগ করতে হবে। আর, সমানভাবেই দায়ী থাকবে এবং এ অবাধ্যতার পূর্ণ ফল-ভোগ করতে হবে সকল মুরব্বি এবং যে কোন কর্তৃপক্ষকে, যারাই এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধা প্রদান করবে বা করছে।

একটি বিষয়ে আমাদের সবাইকে খুব খেয়াল রাখতে হবে বা সাবধান থাকতে হবে, আর, তা হলঃ 

মহা-বৈজ্ঞানিক আল্লাহ, তাঁর চির-আধুনিক মহা বিজ্ঞান-গ্রন্থ আল-ক্বেুারআন, ইসলাম এবং ইসলামী শরিয়ত শুধুমাত্র বুদ্ধিমানদের জন্য, চিন্তাশীলদের জন্য;  কোন আহ্মক-নির্বোধ-মুর্খ-বোকার জন্য নয়, কোন নাস্তিকের জন্য নয়, নয় কোন অবিশ^াসীর জন্য, আর না কোন পাগলের জন্য। পাগলের উপর তো কোন আইন বা বিধানই বর্তায় না।  

এই যে আমি ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের একজন ছাত্র, এবং দেশে-বিদেশে গড়ে প্রায় ৪৫ বছরের শিক্ষক। নারীর উথাল-লম্বা ঢেউ-খেলানো কালো কেশ ও তার রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে মুর্খ-আহ্মকের মত আমি স্বয়ংও কবিতা লিখতেই পারি, তবে আমাকে স্মরন রাখতেই হবে যে, নারীর হিজাব হচ্ছে আল-ক্বোআনের একটি টোপিক, এটা কখনোই কোন কবিতার টোপিক নয়। আর আল-ক্বোরআন কোন কবিতার বইও নয়, এবং আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) কে কোন কবিতা-শিক্ষাও দেন নি। তাই, নবিজী কোন কবিও ছিলেন না। ক্বোরআন হল পৃথিবীতে মানবের জন্য একটি শ^াশত-চিরন্তন গাইডবুক এবং অপরিবর্তনীয় একটি শ^াসনতন্ত্র বা সংবিধান। 
      
হিজাব হল নারীর একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটা তার নিজ ধর্মীয় অধিকারও বটে। এ অধিকার তার জন্য হল একটি ইম্মিডিয়েট-তাৎক্ষনিক এবং একই সাথে লং-রান ঐশী এবং নৈতিক প্রোটেক্শন, যেটা তাকে দিয়েছে তার মহান আল্লাহ্র ঐশী-গ্রন্থ আল-ক্বোরআন। নারীর মান, মর্যাদা, সভ্যতা, উচ্চাসন, সম্মান সবই তাকে দিয়েছে তার এ হিজাব বা পর্দা। এ প্রোটেক্শন হল নারীর প্রতি পুরুষের অসম্মানজনক এবং লালুশে চাহনীর বিরুদ্ধে প্রথম ও তাৎক্ষনিক রেড-সিগনাল বা বাধা, যাতে সেই পুরুষ এই নারীর দিকে আর এক কদমও আগাবার দুঃসাহস না করে বা না দেখায়।

নবিজী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “একজন নারীর হায়া বা ভদ্রতা ‘উত্তম কিছু’ ব্যতিরেকে অন্য কিছুই আনে না”। হিজাব একজন মুসলিম নারীকে পুরুষের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। নারীর রূপ-লাবন্য শুধুমাত্র তার জীবনসঙ্গীর জন্য, অন্য কারো জন্য নয়। আমার সহকর্মী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর তৈমুরের ভাষায়, “ স্যার! একজন নারী যখনই তার রূপ-সৌন্দর্য অন্যেকে দেখায়, তখনই সে সস্তা বনে যায়”। বেহায়া-বেপর্দা নারী মনে করতে পারে, সে স্বাধীন; কিন্তু সে এটুকুই জানে না যে, আইন মানার মধ্যেই প্রকৃত স্বাধীনতা লুকিয়ে থাকে। শালীন হিজাব-পোশাকের মধ্য দিয়েই একজন নারীর আত্মার বিশুদ্ধতা এবং আত্ম-প্রসাদ, আত্ম-তৃপ্তি, ও আত্ম-সৎসাহস পরিপূর্ণতা পায়।

নারীর হিজাব-পর্দাই তাঁর উচ্চ-বংশ, ভদ্রতা ও অমায়িকতার লক্ষণ বা বহিঃপ্রকাশ। নারীর সৌন্দর্য ইক্জিভিশন বা ডিস্প্লে করার  জন্য নয়। তদুপরি, নারী শুধু একজন ব্যক্তিই নয়, বরং সে পুরুষের মতই একটা ব্যক্তিত্ব, একটি সত্ত¡া এবং একটি আত্মাও বটে। হিজাবের মধ্য দিয়েই নারী তার বিশ^াসের পরিচয়ও দেয়। নারীর হিজাবই তাকে তার স্বাধীনতার বার্তা দেয়।

আমি অনেকটা বাধ্য হয়েই লিখছি, আমার দীর্ঘ ৭ বছরের বিশ^-স্বীকৃত পিএইচডি ডিগ্রি বা গবেষণা “নারী-অধিকারের” উপরই। তাই, এ বিষয়ের উপর ইংরেজি-বাংলায় কথা বলা আমার অধিকারের মধ্যেই পড়ে। নারীর হিজাবই একজন পুরুষকে বাধ্য করে তার সাথে ভদ্রতা ও সম্মানের সহিত কথা বলতে। অন্যতায় এ নারী তার কাছে একটি বস্তু বা একটি পণ্যে পরিণত হয়ে যায়। 

পুরুষের মত নারীকেও আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদাতের জন্য। তাই, কোন নারীই বাজার গরম করার জন্য বিজ্ঞাপণের বস্তু হতে পারে না। অথচ, পুরুষরা নারীকে এ কাজেই লাগায় অধিক, যাতে তার আমদানি-রপ্তানি বাড়ে। 

হে সম্মানিত মা-বোনেরা! আপনারা সকলেই নিজেদের আত্মসম্মানবোধকে আরও জাগ্রত করুন। 

আর, বিশ^ব্যাপি করোনাকালে তো গবেষকরা প্রমান করেই দিয়েছেন, মাস্কেই নারীদেরকে অধিক সম্মানজনক দেখায়। আর পুরুষদের প্রতি আল্লাহ্র মেসেজ হলঃ 

“তোমরা তোমাদের নারীদেরকে যেহেতু হিজাব-পর্দা করাবাই না, সেহেতু দেখে নাও, আমি আল্লাহ শুধু ইচ্ছা করিলে তোমরা-পুরুষদেরকেও কী ভাবে পুটলা বানাতে পারি”। 

আর, তখন বুঝাও মুশকিল, এ পুটলা-পরুষটি আসলেই নারী না পুরুষ, সন্ত্রাসি কি না, আর তার কাছে এ্যটোম-বোমাও তো থাকতেই পারে!
পরিশেষে বলি, শুধু নারীকে নয়, নারীর স্বাধীনতাকেও সম্মান করতে হবে। অধিকন্তু, প্রকৃত নারী-স্বাধীনতার জন্য নারীর হিজাবই যথেষ্ট।

লেখকঃ মোঃ আতী উল্লাহ (বিসিএস, পিএইচডি), ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন ও দীর্ঘদিনের বিভাগীয় প্রধান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, সিলেট এবং দেশে-বিদেশে সাড়ে চার দশকেরও অধিক সময়ের ইংরেজি সাহিত্য এবং ইংরেজি ভাষার শিক্ষক।

 

লেখক - প্রফেসর ড. মোঃ আতী উল্লাহ